ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে অবস্থিত হরিপুর বড়বাড়ি। ১৮শ’ শতাব্দীতে প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী। এই বাড়িটি ‘হরিপুর
জমিদারবাড়ি’ ও ‘হরিপুর রাজবাড়ি’ নামেও পরিচিত। এটি তিতাস নদীর পূর্ব পারে অবস্থিত। এজন্য বর্ষাকালে যখন পানিতে চারদিক ভরে উঠে তখন এর সৌন্দর্য অনেকটা বেড়ে যায়।
হরিপুর বড়বাড়ি দুই গম্বুজ বিশিষ্ট একটি তিনতলা বাড়ি। বাড়িটির আয়তন ও স্থাপত্য শৈলী ঐতিহাসিক যুগের শৈল্পিক নৈপুণ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এটি আনুমানিক ৫ একর জমির উপর নির্মিত; যেখানে মোট ৬০টি কক্ষে নাট্যশালা, দরবার হল, গুদাম, গোশালা, রন্ধনশালা, প্রমোদের কক্ষ, খেলার মাঠ, মঠ, মন্দির, মল পুকুর ইত্যাদি বিদ্যমান। দোতলায় উঠার জন্য ছয়টি সিঁড়ি এবং তিনতলায় উঠার জন্য দুইটি সিঁড়ি রয়েছে। এর উত্তর-পশ্চিম দিকে ছয়টি শোয়ার ঘর, চারটি রয়েছে পূর্ব দিকে আর চারটি রয়েছে পুকুরের পশ্চিম পার্শ্বে।
বাড়িটির পশ্চিম দিকে সান বাঁধানো ঘাট রয়েছে, যেটি নদীতে গিয়ে নেমেছে এবং এর উভয় দিকের মঠদ্বয় সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। যার একটি উত্তর পার্শ্ব কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী ও অপরটি দক্ষিণ পার্শ্বে গৌরীপ্রসাদ রায় চৌধুরীর। পূর্বে এই এলাকার মানুষ যাতায়াত সুবিধা আরামদায়ক করার জন্য নদীপথ ব্যবহার করতো আর এ কারণেই হয়তো মূল ফটক হিসেবে আকর্ষণী এ ঘাটটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
হরিপুরের জমিদারেরা ত্রিপুরার প্রভাবশালী জমিদারগণের উত্তরসুরী ছিলেন। স্থানীয়দের মধ্যে জনশ্রুতি রয়েছে সুনামগঞ্জ, ছাতক, দোয়ারাবাজার এবং আজমিরীগঞ্জের জনপদ এই জমিদারদের কর প্রদান করতো। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এসব জমিদার প্রাসাদ ছেড়ে কলকাতায় চলে যায়। ঐতিহাসিক নৌকা বাইচ খেলার শুরু হয়েছিল এখান থেকেই। প্রাসাদের অনেক জায়গা ভেঙে গেলেও দোতলার পাশা খেলার ঘরটি আজও অক্ষত রয়ে গেছে। বাইজীরা প্রতি রাতেই জমিদারগণের আমোদ-প্রমোদের জন্য এখানে নৃত্য পরিবেশন করতো।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এই হরিপুর বড়বাড়িতে অনেক ছবি নির্মিত হয়েছে। মধু মালতি, নাইওরী, ঘেটুপুত্র কমলা এইসব এখানেই নির্মাণ করা। বর্তমানে হরিপুর বড়বাড়িটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর দ্বারা সংরক্ষিত।
0 Comments
If you have any doubts or questions, let me know.