Header Ads Widget

বিক্রমপুর মহাকালী চৌধুরীবাড়ী, Mohakali Rajbari Bikrompur

 





বিক্রমপুর মহাকালী চৌধুরীবাড়ী, জমিদারির সঙ্গে সঙ্গে সেই বংশের ইতিহাস আজ তলিয়ে গেছে বিস্মৃতির অতলে, যদিও আভিজাত্য এবং ঐতিহ্যের নিরিখে খুব নগণ্য ছিল না সেই জমিদারবাড়ী। 

বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের কেওয়াড় গ্রামকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত ছিল যাদের জমিদারী, প্রায় দুই শতক ধরে মুন্সীগঞ্জ, যার আদিনাম ছিল বিক্রমপুর, বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত। অবিভক্ত বাংলার বহু জমিদারির একটি ছিল মুন্সীগঞ্জের মহাকালী চৌধুরীদের। এই হিন্দু ব্রাহ্মণ চৌধুরীদের আদিনিবাস ছিল ময়মনসিংহ।আনুমানিক সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে, সেই বংশের একটি শাখা ময়মনসিংহ থেকে মুন্সীগঞ্জে অর্থাৎ বিক্রমপুরে এসে বসবাস করতে শুরু করেন।                                                                  

আনুমানিক সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে, বা অষ্টাদশ শতাব্দীর গোড়ায়, কোনো রাজা (বা বৃহৎ জমিদার) খুশী হয়ে কৌলিক পেশায় নিযুক্ত এই বংশের এক ব্রাহ্মণকে বেশ কিছু জমি দান করেন। আবার কেউ কেউ বলে থাকেন যে ভাওয়াল এস্টেটের অন্তর্গত এই জমিদারী তৈরী হয়েছিল ভাওয়ালেরই এক জমিদারের বদান্যতায়, অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে। 

১৭০৪ খৃষ্টাব্দে, খাজনা আদায়ের আইন পরিবর্তনের সময়, মুর্শিদকুলি খাঁ বহু দেওয়ানকে জমিদার পদে উন্নীত করে দেন। ভাওয়ালের রায় পরিবারও এইসময় দেওয়ান থেকে জমিদার হন, এবং ভবিষ্যতে প্রচুর সম্পত্তির অধিকারী হয়ে ‘রাজা’ উপাধি প্রাপ্ত হন — ভাওয়ালের ‘রাজা’রা রায় বা রায়চৌধুরী পরিবার হিসাবে ইতিহাসের পাতায় খ্যাত। এই পরিবারের রমেন্দ্রনারায়ণ রায়কে কেন্দ্র করে ভাওয়াল সন্ন্যাসীর মামলার কথা তো সর্বজনবিদিত। রায় পরিবারের কুশধ্বজ রায় প্রথম দেওয়ানীর কাজ নিয়ে ভাওয়ালে এসেছিলেন, বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রাম থেকে। সেই গ্রাম ছিলো কেওয়াড় গ্রামের ঠিক পাশেই। শোনা যায় চৌধুরী এবং রায়, এই দুই ব্রাহ্মণ পরিবারে ঘনিষ্ঠতা ছিল — কুশধ্বজ রায়, বলরাম রায়েদের সাহচর্যেই কেওয়াড়ের চৌধুরী জমিদারবাড়ীর পত্তন। পরবর্তীকালে চৌধুরী বংশের উত্তরসূরীরা সেই জমিদারীকে বাড়িয়ে তোলেন, এবং বর্ধিষ্ণু জমিদার হিসাবে খ্যাতি প্রাপ্ত হন।                                            

এই বংশের সর্বাধিক উন্নতি হয় শ্রীঅযোধ্যা নারায়ণ চৌধুরীর (জন্ম আনুমানিক ১৭৭৫ খৃষ্টাব্দ) আমলে। জমিদারি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রজাদের সুবিধার জন্যে পুকুর কাটা, রাস্তা তৈরী করা, দোল-দুর্গোৎসব পালাপার্বণে গ্রামবাসীদের জন্যে যাত্রাপালা ও আহারাদির বন্দোবস্তো করা ইত্যাদি বহু সৎকাজে তিনি নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। 

তথ্যসুত্র : ইরাবতীর “ঐতিহ্য” সংখ্যায় প্রকাশিত শকুন্তলা চৌধুরীর প্রতিবেদন থেকে সংকলিত।   







        

বিক্রমপুর মহাকালী “চৌধুরীবাড়ী মঠ”। শ্রী উমানাথ চৌধুরী তাঁর পিতা শ্রীকেবলকৃষ্ণ চৌধুরীর স্মরণে, চৌধুরীবাড়ীর মন্দির সংলগ্ন জমিতে একটি সুউচ্চ বিশাল মঠ নির্মাণ করেছিলেন । আনুমানিক ১৮৬৩ থেকে ১৮৬৫ খৃষ্টাব্দের মধ্যবর্তী কোনো সময়ে। এই মঠটি তৈরী করতে তিনি বহু অর্থ এবং সময় ব্যয় করেছিলেন বলে শোনা যায়। এটি বৃটিশ নক্সায় তৈরী একটি পঞ্চরত্ন মঠ । যার চারপাশে চারটি ছোট মঠ এবং মাঝখানে একটি বড়ো মঠ ছিল। মঠের দেওয়ালে টেরাকোটার কাজ করার জন্য সুদূর বিষ্ণুপুর থেকে কারিগর নিয়ে আসা হয়েছিল। মঠটির স্থাপত্য এবং কারুকার্য ছিল অতুলনীয়। বহুদূর থেকে এই মঠটির চূড়া দেখা যেত। প্রায় একশো ফুটের ওপর উঁচু এই মঠটিকে পদ্মা এবং মেঘনা দুই নদী থেকেই পরিষ্কার দেখা যেত।

তথ্যসুত্র : ইরাবতীর “ঐতিহ্য” সংখ্যায় প্রকাশিত শকুন্তলা চৌধুরীর প্রতিবেদন থেকে সংকলিত

 




 


Post a Comment

0 Comments