মোহনীয় মঙ্গলাবাস
মোহিনী মোহন দাস রোডে ঢাকার একটি অনিন্দ্য সুন্দর একখানা বাড়ি এখন লোক চক্ষুর অন্তরালে অযত্ন, অবহেলায় পড়ে আছে, নাম তার মঙ্গলাবাস।
মঙ্গলাবাস ইউরোপের রেনেসাঁ সময়কালের নিও ক্লাসিক্যাল রীতিতে নির্মিত তাই সন্দেহাতীত ভাবে নির্মাণকাল ১৮০০ সালের প্রারম্ভিক সময় ধরে নেয়া যায়।
১৮৩০ সালে ঢাকায় জমিদার ছিলেন ৭৪ জন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন এই সুরম্য নিকেতনের স্বপ্ন দ্রষ্টা যতীন্দ্র মোহন সাহা।
পুরোনো ঢাকার ঋষিকেশ দাস রোডকে ঘিরে আছে তিনটি সরু গলিপথ ,রেবতী মোহন দাস রোড,হেমেন্দ্র দাস রোড ও মোহিনী মোহন দাস রোড।
সুবর্ণ বনিক ও সাহারা ছিলেন একসময় ঢাকার ব্যবসার প্রাণ ভোমরা।উনিশ শতকের গোড়ায় তাদের হাতেই ছিল শস্যদানা,চাল,ডাল,লবন,পাট,স্বর্ন ,বস্ত্র অর্থ লগ্নি ও টাকা পয়সা বিনিময় ব্যবসার চাবিকাঠি।যতীন্দ্র বাবু ছিলেন তাদেরই প্রতিনিধি দেবী লক্ষীর কৃপায় মনের মাধুরী মিশিয়ে বানালেন মঙ্গলাবাস।
অতীত ঢাকার সৌন্দর্যে, শান- শওকত, কৃতিত্বের দলিল দস্তাবেজ খুবই অপ্রতুল । এর মধ্যেই কোনরকম ধুঁকে ধুঁকে তারই প্রতিনিধিত্ব করছে মঙ্গলাবাস,স্থানীয়দের মতে এটি একটি “জমিদার বাড়ী”ব্যস এটুকুই আর বিশেষ কোনো তথ্য নেই।
মোহিনী মোহন দাস রোডে অবস্থিত মঙ্গলাবাসের মুল প্রবেশ পথ পূর্বাভিমুখী।প্রবেশ পথ চারটি স্তম্ভ নিয়ে নির্মিত। প্রবেশ পথের ওপরে রেনেসাঁ রীতির স্পষ্ট রাজকীয় ছাপ রয়েছে। স্তম্ভের পেছনে সারি সারি ৩৪ টি কক্ষ।এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে সুগম যাতায়াত পথ আছে।
ইমারতটি ইটের তৈরী গাঁথুনিতে চুন-সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। দেয়ালগুলো মজবুত ৩০”পুরু, ছাদ নির্মাণে অনুসৃত হয়েছে কড়ি বর্গা পদ্ধতি চতুষ্কোণ অঙ্গনের কক্ষগুলো টানা বারানদার পেছনে সারিবদ্ধ ভাবে নির্মিত।
স্থাপনাটি অলংকরণে মোজাইক ও রঙ্গীন কাচেরঁ শার্সি ব্যবহৃত হয়েছে।দরজা ও জানালা নির্মাণেও সৃজনশীলতা লক্ষ্য করা যায়। কাস্ট আয়রন দিয়ে নির্মিত রেলিং ইমারতটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুন।এছাড়া বারান্দার রেলিংয়ের উপরে কাঠের জাফরির ব্যবহার মনোমুগ্ধকর ও রোদ -বৃষ্টি নিরোধক।ইমারতটির ব্যালাস্ট্রেড সিড়িতে যখন পা দেবেন তখন একটা রাজকীয় ভাব চলে আসবে আপনার মধ্যে।রাজকীয় এই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই বিশাল আকাশ।সেই মুক্ত আকাশে বিচরণ করছে আমাদের ঢাকার অজানা ইতিহাস।
মঙ্গলাবাস এতদিন অন্তরালে ছিল, আশা করি একদিন হৃত গৌরব ফিরে পাবে।
0 Comments
If you have any doubts or questions, let me know.